অর্ধশতাব্দী পরেও তারকনন্দী কাঠের সেতু দিয়ে একজন দিনমজুর ভ্যানচালককে পারাপার হতে গেলে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে আগে সেতুর পাটাতানের ভাঙ্গাচুরা এলোমেলে কাঠগুলো হাতদিয়ে কোনরকম বসিয়ে নিয়ে ঝুকিপূর্ণভাবে পার হতে হচ্ছে৷ অনেক সময় এখানকার দূর্ঘটনায় ভ্যান মেরামতেই গুনতে হয় কয়েক দিনের মজুরির টাকা৷ একটা কাঠের সাথে অন্যটির সংযুক্তি না থাকাই বৃদ্ধ ও বাচ্চারা ভেঙেচুরে সেতু থেকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত ও জখম হওয়ার ঘটনা যেন প্রতিদিনকর বিষয় হয়ে চলেছে৷ সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌর সদরের যুগিবাড়ী সংলগ্ন বেত্রাবতি নদীর ওপর নির্মিত মুরারিকাটি কাঠের সেতুটি সংস্কারের অভাবে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এলাকার ২০ হাজার মানুষের কাঠের পরিবর্তে নতুন পাকা সেতু নির্মাণের দাবি পূরণ হয়নি এখনও। মুরারীকাটি তারকনন্দী পরিবারের ছেলে আনন্দ নন্দী বলেন, প্রায় ৭০ বছর আগে মুরারিকাটি গ্রামের তৎকালীন জমিদার তারক নন্দী এলাকার উন্নয়নে বেতনা নদীর ওপর লোহার ফ্রেম ও কাঠের পাটাতন দিয়ে দক্ষিণ মুরারিকাটি সেতু নির্মাণ করেন। এরপর স্থানীয় দক্ষিণ মুরারিকাটি, গোপিনাথপুর, পাথরঘাটা, ঘর চালা, কাশিয়াডাঙা, কুমারনল যুগীবাড়ীসহ পার্শ্ববর্তী ২০টি গ্রামের মানুষের সাথে ও কলারোয়া বাজার পৌর সদরের সঙ্গে সেতু বন্ধন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে সেতুটি।সেতুটি ১৯৫৬ সালে ভেঙে গেলে যাতায়াতের দুর্ভোগে পড়েন এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। পরবর্তীতে এলাকাবাসী কাঠ দিয়ে সেতুটি মেরামত করে কোনোরকমে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছেন। বর্তমানে সেতুটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ অনেক স্থানে কাঠের পাটাতন উঠে গেছে। লোহার কাঠামোগুলোতে মরিচা পড়ে অংশ বিশেষ খসে পড়ছে।মুরারীকাটি এলাকার স্বেচ্ছাসেবক আইকন অমিত কুমার বলেন, উপজেলা সদরে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন গ্রামের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১০ হাজার মানুষ কর্মসংস্থানে যোগ ও চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় শিশু বৃদ্ধ (নারী-পুরুষ) পথচারীদের। তবে এ ব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নেই।পথচারী শিখা রানী বলেন, সেতুটির অবস্থা একেবারেই চলাচল অযোগ্য নড়বড়ে৷ হাটতে গেলে কাঠগুলো পথচারীদের ঠিক করে নিতে হয়৷ কয়দিন আগে পাটাতনের কাঠ সরে যাওয়ায় ছোট্ট বাচ্চা নিচে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছে৷ এমন হতাহতের ঘটনা প্রায় প্রতিদিন কারো না কারোর সাথে ঘটছে৷ এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী কাঠের পরিবর্তে একটি ব্রীজ নির্মানের৷ এ বিষয়ে কলারোয়া পৌসভার মেয়র মাষ্টার মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, উপজেলার মুরারীকাটি বেত্রাবতি নদীর উপর অন্যতম প্রাচীন সেতু তারক নন্দী৷ বহুদিনের কাঠের তৈরি হওয়ায় অনোকটা নড়বড়ে তবে বিভিন্ন সময়ে মেরামত করা হয় ৷ গত ৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ইংরেজি তারিখে ৪৬.০২.৮৭৪৩.০০০.৬৮১ স্মারকে নদীর উপর ১৫০ মিটার টেকসই সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট একটি প্রস্তাব পাঠনো হয়েছে৷ আপাতত চলাচলের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

এক্সক্লুসিভ রিলেটেড নিউজ

সর্বশেষ