যশোরে আগাম জাতের শিম চাষ করে লাভবান হয়েছেন কৃষক। চলতি মৌসুমের শুরুতেই এখন শিমে ভরে উঠেছে মাঠজুড়ে। দামটাও ভালো পেয়ে খুশি কৃষক। তেমনি, সড়কের দু’ধারের শত শত জমিতে মাচানের উপর শিম গাছগুলোতে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। এতে আবহমান গ্রাম বাংলার অন্যরকম এক দৃশ্য হাতছানি দিচ্ছে।জেলার অন্তত পাঁচ হাজার কৃষক শিম চাষে লাভবান হচ্ছেন। সবজি চাষের রাজধানীখ্যাত যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের দু'ধারে গ্রাম সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠি, বারীনগর, সাতমাইল, বাঘারপাড়ার খাজুরা ও বন্দবিলা এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি ক্ষেতেই দোলা দিচ্ছে শিম ফুল, আর শিম।এখনো বাজারে ভালো দাম থাকায় ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক। তবে চলতি মৌসুমে শুধুমাত্র বাঘারপাড়ার বন্দবিলা গ্রামের শতাধিক কৃষক শিম চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন।স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জৈষ্ঠ্য মাসের শেষেই আগাম জাতের শিম বীজ বপন করা হয়েছে। ফলে অন্তত আরও আড়াই মাস আগে ভাদ্র মাসের শুরুতেই শিম উঠতে শুরু হয়েছে।প্রথমদিকে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে শিম বিক্রি হয়েছে। তবে দিন যতো যাচ্ছে, ততোই একদিকে শিমের ফলন বাড়ছে, তাছাড়া শীত মৌসুমকে টার্গেট করে লাগানো জমির শিম উঠতে শুরু করেছে। এতে দামটা কমে সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসছে। কিছুদিন আগেও ৮০ টাকা দরে শিম বিক্রি হলেও বর্তমানে ৪৫থেকে ৫০ টাকা পাইকরি দরে শিম বেচাকেনা হচ্ছে।যশোরাঞ্চলে উৎপাদিত আগাম জাতের শিম ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও আসন্ন জানুয়ারি থেকে তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদিআরবসহ কয়েকটি দেশে শিম রফতানি করা হবে আশা প্রকাশ করছেন স্থানীয় কৃষকেরা।যশোর সদর উপজেলার দৌলতদিহি গ্রামের কৃষক কিবরিয়া এবং শওকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, একবিঘা জমিতে শিম চাষে খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। মাঘ মাস পর্যন্ত কমপক্ষে তিন হাজার কেজি শিম বিক্রি করতে পারবেন। প্রতিকেজি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাবেন। কিন্তু আগের আমলের দেশি শিম যেমন ঘি-কাঞ্চন, হাতিকানি, বানতোড়া, কাকিলা ও পুটুলে প্রভৃতি শিমের চাষ করে এই লাভটা পাওয়া যেতো না।সদর উপজেলার চূড়ামনকাটি গ্রামের সবচেয়ে পুরাতন শিমচাষী ওলিয়ার রহমান, জালাল উদ্দিন, হাফেজ বখতিয়ার বাংলানিউজকে বলেন, আগাম শিম চাষে কিছুটা প্রযুক্তিগত জ্ঞানের দরকার হয়। পরাগায়ণের পর সৃষ্ট ক্ষুদ্র শিমটি ফুল দিয়ে আবৃত থাকে। ফুল সরিয়ে না দিলে সেটি পূর্ণাঙ্গ শিমে পরিণত হতে পারে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানিতে অথবা শিশিরে ফুল ভিজে পচে যায়। কিন্তু বর্তমানে শিমের উন্নত জাতের উদ্ভাবনের কারণে ওই ধরনের সমস্যা নেই, এখন কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই শিম চাষ করা যাচ্ছে।যশোর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এসএম খালিদ সাইফুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমে সদর উপজেলাতেই ৬শ' হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। এতে ১৫শ' থেকে ১৬শ' কৃষক লাভবান হচ্ছেন।তিনি আরও বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শিম চাষ খুব ভালো হয়েছে। মৌসুমে শিম চাষের চেয়েও আগাম চাষে বেশি লাভবান হচ্ছেন কৃষক। তবে আসন্ন জানুয়ারিতে গতবছরের মতো কয়েকটি দেশে শিম পাঠানো হলে কৃষক ন্যায্য দাম পাবেন।

এক্সক্লুসিভ রিলেটেড নিউজ

সর্বশেষ