কবি তার কবিতায় লিখে ছিলেন ‘আমাদের গ্রাম’ কবিতায় লিখেছেন, ‘আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর/থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর’। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর এবং ঘরে বসবাসকারীদের দেখে কবি বন্দে আলী মিয়ার কবিতার চরণগুলোর কথা মনে পড়ে। কিছু দিন আগেও আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীরা কেউ কাউকে চিনতেন না কেউ কারো সাথে তেমন একটা যোগাযোগ ছিলোনা। কেউ বাস করতেন ইউনিয়নের এ প্রান্তে তো কেউ অপর প্রান্তে করতো বসবাস। কারো সঙ্গে কারো ছিল না কোনো পরিচয়। পেশায় কেউ ছিলেন ভ্যানচালক, কেউ বা দিনমজুর আবার ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন চালান এমনও আছেন কেউ কেউ। পূর্ব-পরিচিতি না থাকা কিংবা ভিন্ন পেশা কোনো কিছুই বাধা হয়নি বসবাসকারীদের। অল্প সময়ে আত্মীয়তার বন্ধনে বেঁধেছেন একে অপরকে। এক একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প যেন এক একটি গ্রাম। সম্প্রতি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, লাল-সবুজের টিনের চালের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য যেন বাংলাদেশের ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে বহন করছে। পুরো আশ্রয়ণ এলাকাজুড়ে কর্মে ব্যস্ত নতুন বসবাসরত বাসিন্দারা। ঘরের পাশে খুঁটিতে বাঁধা ছাগল আর গরু গুলোকে সবুজ ঘাস এনে দিচ্ছেন এক গৃহিণী। ঘরের বারান্দায় ভ্যানের মধ্যে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন মাঝবয়সি একজন। বারান্দা থেকে ভেসে আসছে সেলাই মেশিনের খটখট আওয়াজ। আশ্রয়ণের প্রতিটি ঘরের সামনে টিন দিয়ে সীমানা দিয়েছেন বসবাসকারীরা। কেউ ব্যস্ত গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির খাবার দিতে, কেউ করছেন রান্নাবান্না। বারান্দায় বসে শিশু-কিশোরা খেলছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসবাসকারীরা শোনান তাদের ভালো থাকার গল্প। পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের ১ম ও ২য় পর্যায়ে বরাদ্দ পাওয়া ১০৩৩টি পরিবার ঘর পেয়ে ইতোমধ্যে বসবাস শুরু করেছেন। ৩য় পর্যায়ে দেবীগঞ্জ উপজেলায় ৭৭০ টি পরিবারের মধ্যে ভূমি ও গৃহ বরাদ্দ দেয়া হবে। তিন ধাপে সর্বমোট ১৮০৩টি ঘরের মধ্যে ইতোমধ্যে ১ হাজার ২৩৩টি ঘর উদ্বোধন হয়ে গেছে। বাকি ৫৭০ টি ঘরের নির্মাণকাজও শেষের দিকে। প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে। চলতি মাসের ৩০শে জুন তারিখের মধ্যে ঘরের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হবে বলে জানা গেছে। এরপর আগামী ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পঞ্চগড়কে শতভাগ গৃহায়ণ (ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত) জেলা হিসেবে ঘোষণা করার কথা রয়েছে। পঞ্চগড়ের আশ্রয়ণের বাসিন্দারা বলেন এখানে আশ্রয়ণ হওয়ার আগ মুহূর্তে আমাদের ছিল না নিজের কোনো জমিজমা। আশ্রয়ণের বাসিন্দারা বলেন, জাতির পিতার কন্যা আমাদের মতো অসহায়-আশ্রয়ণহীনদের জমিসহ ঘর দিয়েছে। এর চেয়ে আর বড় আনন্দের কী হতে পারে। আমরা তার জন্য দোয়া করি তিনি যেন মানুষের সেবায় কাজ করে যেতে পারেন। আল্লাহ তাকে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখুক। দেবীগঞ্জ উপজেলার ১ নং চিলাহাটি ইউনিয়নের অহিজল কখনো ভাবতেই পারেননি এত সুন্দর পাকা ঘরে বসবাস করতে পারবেন। পাকা ঘর পেয়ে কেমন লাগছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। জানালেন, আগে অন্যর জমিতে বসবাস করতেন। বেশ কিছু দিন হলো এখানে উঠেছেন। গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি তিনিও অন্যের জমিতে কাজ করে সামান্য আয় করেন, মোছাঃসহিরন। বলেন, ‘ভালো আছি, ছোট হলেও নিজের বাড়ি হয়েছে। মানুষের কথা শুনতে হয় না। দেবীগঞ্জ উপজেলার নিবার্হী অফিসার গোলাম ফেরদৌস জানান, বাংলাদেশের কোনো মানুষ ভূমিহীন, গৃহহীন, আশ্রয়হীন থাকবে না। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী এ দীপ্ত ঘোষণা বাস্তবায়নে সারাদেশে ভূমিহীন, গৃহহীনদের একক গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। সেলক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে দেবীগঞ্জ উপজেলার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে গৃহ নির্মাণ শেষ হয়েছে এবং শতভাগ বাসিন্দারা ঘরে উঠেছেন। তৃতীয় পর্যারে গৃহ নির্মাণকাজ শেষের দিকে। ৮৫ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আশা করছি, ৩০ জুনের মধ্যে বাকি কাজও শেষ হবে। এরপর আগামী ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী পঞ্চগড় জেলাকে শতভাগ গৃহায়ণ (ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত) জেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন। মধ্যে বাকি কাজও শেষ হবে। এরপর আগামী ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী পঞ্চগড় জেলাকে শতভাগ গৃহায়ণ (ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত) জেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন।

এক্সক্লুসিভ রিলেটেড নিউজ

সর্বশেষ