সম্পদের পাহাড় প্যানেল মেয়র খোকনের একাল-সেকাল
বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার ০৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে সারে চার বছর আগে নির্বাচনে আংশ গ্রহন করার অপরাধে তৎকালীন কাউন্সিলরের নির্দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয় ওই ওয়ার্ডের কলেজ রোডস্থ আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান আমিনুল ইসলামের ওপর। আহত হয়ে দুটি বছরের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেন আমিনুল।
আসছে ১৬ই জানুয়ারি শেরপুর পৌরসভার ছয় নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দিতা করতে মনোনয়ন পত্র জমা ছিয়েছেন সদ্য বিদায়ী কাউন্সিলর নাজমুল আলম খোকন, জনতার প্রার্থী আমিনুল ইসলাম ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহাবুল করিম। এদিকে শেরপুর পৌরসভার ছয় নাম্বার ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের চার মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু আরফান,রবিউল আশু,আব্দুল হাকিম ও হারুনর রশিদ,আমিনুল ইসলামকে সমর্থন দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রতাহার করে নেন। অপরদিকে ০৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় ওয়ার্ড কমিটির সকল সদস্য আমিনুল ইসলামকে দলীয় সমর্থন দেন, তার প্রেক্ষিতে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমিনুলের নাম সুপারিশ করে রেজুলেশন আকারে শহর কমিটির মাধ্যমে জেলা কমিটি বরাবর প্রেরণ করা হয় কিন্তু অজানা কারণে এই ওয়ার্ডে বিতর্কিত ব্যক্তি নাজমুল আলম খোকনকে দলীয় সমর্থন দেয়া হয়েছে বলে ওই ওয়ার্ডের তৃণমূলের একাধিক নেতা অভিযোগ করেন।
জানা গেছে,২০১৫ সালের শেরপুর পৌর নির্বাচনে ০৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট ডাকাতি করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন নাজমুল আলম খোকন। খোকনের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমিনুল ইসলামের। ওই নির্বাচনের পর ওয়ার্ড কমিশনার খোকনের ইঙ্গিতে নির্মম ভাবে হত্যার উদ্দেশ্য আঘাত করে হাত-পা ভেঙ্গে পঙ্গু করে দেয়া হয় আমিনুলকে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, চান্দা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির শেরপুর উপজেলা এজেন্ট হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন নাজমুল আলম খোকন। গত দুই দশক আগে ছিলেন শেরপুর শহর ছাত্রলীগ সভাপতি এরপর জোটেনী কোন পদ-পদবী। ২০০৮ এর নির্বাচনের পর স্থানীয় এমপির ঘনিষ্ঠ বনে যান খোকন। এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে (সরকারি চাকরি পাইয়ে দেয়া,বদলী সহ নানা তদবীরের নামে) অর্থ গ্রহনের দায়ে একাধিক বার এমপি পরিবার কর্তৃক লাঞ্চিত হন খোকন। একাধিক সমর্থিত সুত্র বলছে গত এক দশক আগেও চান্দা ট্রান্সপোর্টের গাড়ী ভারা পরিশোধ করতে মাত্র দুই হাজার টাকা ধারের জন্য বারবার বিভিন্ন জনের দারস্থ হতেন খোকন। নাম প্রকাশ না করার সর্তে স্থানীয় একজন বলেন খোকন কাউন্সির নির্বাচিত হওয়ার আগেও এই এলাকার অনেক মানুষকে চাকুরী পাইয়ে দেওয়ার নামে অর্থ গ্রহনের দ্বায়ে অনেক বিচার শালিশ হয়েছে। তিনি আরো বলেন,দেনা পরিশোধ করতে না পেরে তার ব্যবহৃত একমাত্র মোটরসাইকেলে এবং স্ত্রীর গলার স্বর্ণের চেইন খুলে দিতেও দেখেছি। লাঞ্চনা-বঞ্চনা সহ্য করেও হাল ছাড়েনি ধূর্ত খোকন। স্থানীয় এমপি পুত্রের সানিধ্য অর্জনের চেষ্টায় থেকে বনে যান ওয়ার্ড কমিশনার। এমপি ও এমপি পুত্রের নাম ভাঙ্গিয়ে গত পাঁচ বছরেই গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। অভিযোগ রয়েছে গত দশ বছরে খোকন অন্তত ১০ কোটি টাকা অর্জন করেছে।
নামে-বেনামে খোকনের রয়েছে একটি লেটেষ্ট টয়েটা প্রিমিও প্রাইভেট কার, সম্প্রতি স্ত্রী জান্নাতুল ফাতেমা'র নামে শেরপুর উপজেলার শ্রীরামপুর মৌজায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি ক্রয় করেন কমিশনার খোকন, একই মৌজায় আছে তিন শতকের একটি প্লট, শেরপুর উপশহর আবাসিক এলাকায় নিজ নামে রয়েছে চার শতকের প্লট। শাহজাহানপুর উপজেলায় তার ধর্মান্তরিত (হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৈবাহিক সুত্রে মুসলমান) হওয়া শাশুড়ি'র নামে একটি বাড়ি ক্রয় করেন তিনি। এছাড়াও রাজধানী ঢাকার মিরপুর এলাকায় খোকন কমিশনারের স্ত্রী-শাশুড়ির নামে অন্তত দুইটি ফ্লাট ক্রয়ের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওই ফ্লাটের একটিতে থেকে কমিশনার পুত্র স্কুল পড়ুয়া আদনিন আলম শখ ঢাকার একটি বিদ্যালয়ে লেখা লেখাপড়া করেন। ওই ফ্লাটে কমিশনার পুত্রের দেখভাল করেন তার শাশুড়ি। করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সাবেক কমিশনারের পুত্র-শাশুড়ি বর্তমানে শেরপুর শহরের প্রফেসর পাড়ার বাড়ীতে আবস্থান করছেন।
শেরপুর পৌরসভার বারবার নির্বাচিত এক কাউন্সিলর আক্ষেপ করে বলেন, যোগ্যতা সহ অভিজ্ঞতা থাকা সত্বেও আমাকে প্যানেল মেয়র করা হয়নি। গত মেয়াদে শেরপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোনোনীত করা নিয়েও হয়েছে অনিয়ম।
জানা গেছে, সম্প্রতি শেরপুর নবনির্মিত পৌর কিচেন মার্কেটে ১০ টি দোকান বরাদ্দ,পৌর এলাকার ধুনটমোড় পৌর টার্মিনাল মার্কেট থেকে ০২ পজিশন বরাদ্দ নিয়ে কমপক্ষে ৫০ লক্ষ টাকা বিক্রি সহ সিএনজি, অটোরিকশা থেকে চাঁদা তোলা,বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ,উপজেলার সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ কাজে স্থানীয় এমপি'র নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা বাগিয়ে নেয়ার অপরাধে খোকনকে আবারো ব্যাপক ভাবে লাঞ্চিত করে সাংসদ পরিবার। এমপির নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজীর অপরাধে খোকন কে অপমাব করে শেরপুর শহরের হাসপাতাল রোডের বাসভবন থেকে বের করে দেন এমপি পুত্র আসিফ ইকবাল।
এদিকে আসছে ১৬ জানুয়ারি শেরপুর পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিতে নাজমুল আলম খোকন তার দেয়া হলফনামায় সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেন, তার নিজের নামে নগদ টাকা ও ব্যবসার পুজি ০৯ লাগ ৩১ হাজার ৮১০ টাকা, স্ত্রীর নামে ২৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা, স্বর্ণা আছে খোকনের ১৭ ভরি ও স্ত্রীর ৬০ ভরি। নিজ নামীয় ৬ শতাংশ জমির মূল্য ৩১ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ২.৫ শতাংশ জমির মূল্য ১৪ লাখ টাকা,সব মিলিয়ে তিনি গত পাঁচ বছরে ০১ কোটি ২৪ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন করার তথ্য দিলেও হলফ নামায় গত পাঁচ বছরে তার এবং তার উপর নির্ভরশীলদের গড় আয় দেখিয়েছে ৩৭ লাখ ৯ হাজার ৫০ টাকা।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের শেরপুর পৌর কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নিতে খোকন তার দেয়া হলফ নামায় উল্লেখ করে ঘটি-বাটি মিলিয়ে তার সম্পদের পরিমান ০২ লাখ টাকা। তার আগের নির্বাচনে ২০১০ সালের হলফনামা অনুযায়ী খোকনের নগদ টাকা পরিমাণ দশ হাজার টাকা বাৎসরিক আয় দেড় লাখ টাকা মাত্র। বক্তব্য জানতে নাজমুল আলম খোকনের সাথে যোগাযোগ করা চেষ্টা করেও তাকে ফোনে পাওয়া যায় নাই।