১৫ গ্রেনেড নিয়ে মঞ্চ ঘিরে ছিল ১২ জঙ্গি
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অংশ নেয় ১২ জঙ্গি। তাদের হাতে মোট ১৫টি গ্রেনেড তুলে দেন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান। আর এই হামলার কমান্ডার হিসেবে ছিলেন জঙ্গি আহসান উল্লাহ কাজল ও আবু জান্দাল। এই মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের স্বীকারোক্তি থেকে এসব তথ্য জানা যায়। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিগুলো আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আসামিদের জবানবন্দি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ১৯, ২০ ও ২১ আগস্ট দফায় দফায় বাড্ডার একটি বাসায় মুফতি আবদুল হান্নানের নেতৃত্বে জঙ্গিরা সভা করে। সেখানে পরিকল্পনা হয় কিভাবে হামলা সফল করা হবে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। এর আগে ২০ আগস্ট আহসান উল্লাহ কাজল ও আবু জান্দাল ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করে আসেন। ২১ আগস্ট ১২ জন জঙ্গি কিভাবে ঘটনাস্থলে যাবে, কে কোথায় অবস্থান করবে, কে প্রথম হামলা করবে, তা বলে দেওয়া হয়। ওই দিন হামলাকারীরা সবাই ওই বাসায় খাবার খায়। খাবার খাওয়ার পর মাওলানা সাইদ জিহাদবিষয়ক বয়ান করেন। এরপর মোনাজাত করেন। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে হামলা যাতে সফল হয় তার জন্য মোনাজাতে অংশ নেয় সব জঙ্গি। এরপর ১২ জনের হাতে ১৫টি গ্রেনেড তুলে দেন মুফতি হান্নান। সবাই বের হয়ে গুলিস্তানে যায়। সেখানে গোলাপ শাহ মাজার মসজিদে আবার সবাই একত্রিত হয়। হামলার আগে মসজিদ থেকে বের হয়ে জঙ্গিরা সমাবেশে তৈরি করা মঞ্চের (ট্রাক) চারপাশে অবস্থান নেয়।মামলার আসামি জাহাঙ্গীর আলম আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, ২১ আগস্ট জোহরের নামাজ ও খাওয়াদাওয়া এবং মোনাজাতের পর বাড্ডার বাসা থেকে মুফতি হান্নান তাঁর দলের জঙ্গিদের ডেকে গ্রেনেড দেখান। গ্রেনেড নিক্ষেপের কৌশলও বুঝিয়ে দেন। সেখানে জঙ্গি জাহাঙ্গীর, আহসান উল্লাহ কাজল, আবু জাফর, লিটন, মাসুদ, সবুজ, খলিল, রতন, মুত্তাকিন, মুরসালিনসহ অন্যরা ছিলেন। তাঁরা দুজন দুজন করে ভাগ হয়ে জনসভাস্থলে যান। মাসুদ ও জাহাঙ্গীর অবস্থান নেন মঞ্চের সামনে। শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে মাসুদ ট্রাকের পেছনে যান। প্রথম একটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। এরপর জাহাঙ্গীর একটি গ্রেনেড মারেন। তাঁর কাছে হামলার জন্য দুটি গ্রেনেড দেওয়া হয়েছিল। অন্যটি ট্রাকের পাশে ফেলে পালিয়ে যান।আসামি আবুল কালাম বুলবুলের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, প্রথম গ্রেনেডটি আবু জান্দাল মেরেছিলেন। এরপর সবাই একযোগে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। তিনি জবানবন্দিতে বলেছেন, তাঁরা সমাবেশে আসা মিছিলের সঙ্গে মিশে ট্রাকের (শেখ হাসিনা যেটিতে ভাষণ দেন) মাথার কাছে অবস্থান নেন। সেখানে আবুল কালাম বুলবুল ছাড়াও জাফর ওরফে আবু জান্দাল, কাজল ও লিটন ছিলেন। ট্রাকের পশ্চিম পাশে ছিলেন রতন, ইকবাল ও মাসুদ। জাহাঙ্গীর, সবুজ, খলিল, মুরসালিন ও মুত্তাকিন ট্রাকের উত্তর পাশে অবস্থান নেন।আসামিদের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, বুলবুলের কাছে থাকা গ্রেনেডটি তিনি মারেননি। সেটি নিয়েই তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে যান। জাহাঙ্গীর ও মাসুদের কাছে দুটি করে গ্রেনেড দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীর তাঁর একটি গ্রেনেড ট্রাকের পাশে ও আরেকটি পাশের মার্কেটের টয়লেটের মধ্যে ফেলে দেন।