এই তো চার মাস আগে (এ বছর জুলাইতে) ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে খাবি খেয়েছে টাইগাররা। এন্টিগায় প্রথম টেস্টে ২১৯ রানে হারের পর জ্যামাইকায় দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ১৬৬ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছিল সাকিবের দল। ঐ দুই ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশের চেয়েও এন্টিগায় প্রথম ইনিংসে ৪৩ রানে অলআউট হবার করুণ পরিণতির কথা সবার মনে গেঁথে ছিল।এবার তার মধুর প্রতিশোধ সাকিব বাহিনীর। ঘরের মাঠে ক্যারিবীয়দের চট্টগ্রামে ৬৪ রানে এবং ঢাকায় ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারিয়ে সমুচিত জবাব। বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকরা এ সিরিজ বিজয় এবং ‘বাংলাওয়াশকে’ সমুচিত জবাব বলেই মনে করছেন।কিন্তু যার এটাকে সমুচিত জবাব বলে মনে করার কথা, যিনি এই সিরিজের আগে দলের প্রতিটি সদস্যকে উদ্দীপ্ত করতে এবং সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দিতে উদ্দীপক বক্তব্য দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমরা সবাই গত জুলাই মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট সিরিজের কথা স্মরণ করো। সেই করুণ পরিণতির কথা চিন্তা করো’-সেই অধিনায়ক সাকিব এটাকে জবাব মানতে নারাজ।তার মূল্যায়ন, আসলে এটা জবাব নয়। স্বাগতিক দেশ হিসেবে পরিবেশ-পরিস্থিতির সুবিধা নেয়া। চার মাস আগে নিজ মাটিতে ক্যারিবীয়রা হোম এডভান্টেজ নিয়েছিলো। এবার তার দল দেশের মাটিতে স্পিন সহায় উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নাকানি চুবানি খাইয়ে ছেড়েছে।অধিনায়ক এমন মিশন সফল করার জন্য সহযোগি ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। ধন্যবাদও জ্ঞাপন করেছেন। সাকিবের কথা- ‘এটা জবাব দেয়া না, আসলে হোম এডভান্টেজ নেয়া। আসলে এখন সব সিরিজেই হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ের একটা এডভান্টেজ থাকে। ওরা ওদের হোমের এডভান্টেজ নিতে পেরেছে, আমরা আমাদের হোমের এডভান্টেজটা নিতে পেরেছি। ওভাবে হারার পর আমাদের অবশ্যই অনেক কিছু প্রমাণের ছিল। অ্যাট লিস্ট হোমে, সেটা আমরা করতে পেরেছি। সেটার জন্য আসলে আমি প্রতিটা টিমমেটকেই ধন্যবাদ জানাই, কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে সবাই যে এই জিনিসটায় বিশ্বাস করেছে, সিরিজ শুরুর আগে। সত্যি কথা বলতে, আমি অনেক ডিমান্ডিং ছিলাম এই সিরিজটাতে। সবার কাছেই খুব বেশ করে চাচ্ছিলাম।এতদিন বাংলাদেশ নিয়মিত ফলো অন করতো। হোয়াইটওয়াশ হতো। পাঁচদিনের ম্যাচ তিন দিনে হেরে যেত। এবার সে তিক্ত স্মৃতি প্রতিপক্ষকে ফিরিয়ে দিয়েছে টাইগাররা। ১৮ বছরের মাথায় এসে ১০০‘র বেশি টেস্ট খেলার পর ইনিংস বিজয়ের স্বাদ পেয়েছে সাকিবের দল। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফলোঅনে ফেলে ইনিংস পরাজয়ের লজ্জায়ও ডুবিয়ে ছেড়েছে। এটা কি রিসিভিং এন্ডে থাকা আর এখন ফিরিয়ে দেয়া?সাকিবের ব্যাখ্যা, ‘দেখুন, আমরা একশ'র ওপরে টেস্ট ম্যাচ খেলেছি। এই প্রথম এমন কিছু করলাম। অবশ্যই স্পেশাল কিছু। এই ফার্স্ট টাইম এরকম কিছু ঘটল। এর ভেতরে আমরা কিন্তু ছোট টিমের সাথেও খেলেছি। তারপরও আমরা এমন কিছু করতে পারি নি। কাজেই এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা অ্যাচিভমেন্ট আমি মনে করি। এর আগে আমাদের ওপরের কোন টিমকে হোম কন্ডিশনে হোয়াইটওয়াশ করিনি। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের জন্য সিরিজটি অনেক বড় পাওয়ার সিরিজ ছিল।জুলাই-আগস্টের উইন্ডিজ হার মনে রাখা নিয়ে দলকে উজ্জীবিত ও উদ্দীপ্ত করা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে সাকিব বোঝাতে চাইলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্টে পারফরমেন্স যত খরাপ হয়েছে, আসলে তার দল তত খারাপ না। পারফরমাররাও অমন খারাপ নন। সেই বোধ ভিতরে জাগাতেই তিনি বলেছেন ঐ সিরিজের কথা ভাবতে।সাকিবের ভাষায়, ‘হ্যাঁ, কারণ আমি মনে করি যে আমরা যারা প্রতিটা প্লেয়ার ছিলাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে আমরা কেউই এ ধরণের পারফরম্যান্স আমা করিনি। আমরা এমন হারের পর মিটিং করেছি, তারপর স্ট্রংলি কামব্যাক করেছি ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে। যেহেতু আমরা টেস্ট ফরম্যাটে ভালো করিনি, আমাদের হোমে একটা সুযোগ ছিল প্রমাণ করার। ওই কারণেই আমরা চেয়েছিলাম কিছু একটা করি, যেন মানুষ অন্তত ভুলতে পারে বা বুঝতে পারে যে- না, ক্যারিবীয়রা হোমে সুবিধাটা নিতে পেরেছে, আমাদের হোমে আমাদের যতটুকু করা সম্ভব আমরাও ততটুকু করতে পেরেছি।

এক্সক্লুসিভ রিলেটেড নিউজ

সর্বশেষ