মঙ্গলের মাটি খুঁড়ে তথ্য জানাবে ইনসাইট রোবট
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার রোবট ‘ইনসাইট’ সোমবার মঙ্গলগ্রহে সফলভাবে অবতরণ করেছে। এই রোবটটি প্রথম মানবসভ্যতার পাঠানো কোনও মহাকাশযান, যা মঙ্গলগ্রহের মাটি খুঁড়ে তথ্য পাঠাবে। কোন কোন ‘মণি-মাণিক্য’ লুকিয়ে রয়েছে মঙ্গলে, মাটি খুঁড়ে তার তন্নতন্ন তল্লাশী চালাবে নাসার পাঠানো ‘ইনসাইট’ ল্যান্ডার মহাকাশযান। লাল গ্রহ-এর ভেতরে তরল পানির ধারা এখনও গোপনে বয়ে চলেছে কি না, তা-ও খুঁজে দেখবে নাসার এই ল্যান্ডার। দেখবে এখনও অগ্ন্যূৎপাত হয় কি না মঙ্গলের পিঠের নীচে, হলে তা কতটা ভয়াবহ। এও দেখবে, কম্পন কতটা তীব্র হয় ‘লাল গ্রহ’-এর শিলাস্তরে।‘অপরচুনিটি’,‘কিউরিওসিটি’-র মতো দু’টি রোভার পাঠানোর পরেও মঙ্গলে ইনসাইট পাঠানো হয়েছে মূলত, মাটি খোঁড়ার জন্য। মাটি খুঁড়ে মঙ্গলের ভেতরের আগ্নেয়গিরিগুলোর সক্রিয়তা বোঝা ও মাপার জন্য। যা আগামী দিনে চাঁদ ও মঙ্গলে মানবসভ্যতার পুনর্বাসনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাদি হয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস নাসার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জিম ব্রিডেনস্টিনের।নাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইনসাইট তার দু’বছরের মেয়াদে যাবতীয় কাজকর্ম করার জন্য শক্তি নেবে সূর্যের কাছ থেকে। তার জন্য ইনসাইট-এ রয়েছে সোলার প্যানেল। যেগুলো প্রত্যেকটি চওড়ায় সাত ফুট বা ২.২ মিটার। পৃথিবীর চেয়ে সূর্য থেকে দূরে আছে বলে ইনসাইট-এর ওই দু’টি সোলার প্যানেল সূর্যালোক কম পাবে ঠিকই, কিন্তু তাতে কোনও অসুবিধা হবে না তার কাজকর্মে। মেঘমুক্ত আকাশে গিলে ৬০০ থেকে ৭০০ ওয়াট সৌরশক্তি পেলেই ইনসাইট-এর সোলার প্যানেলগুলির প্রয়োজন মিটবে।মঙ্গলে প্রায়ই ধূলিঝড় হয়। আর সেই ঝড় হয়ে উঠলে লাল গ্রহ-এর আকাশ অন্ধকার হয়ে যায়। আর সেটা দীর্ঘ দিন ধরে থাকে। তখন পৃথিবী থেকে আর মঙ্গলের পিঠে নামা রোভার, ল্যান্ডারগুলোকে দেখা যায় না। তাদের সিগন্যাল পাঠানো যায় না। তারাও সিগন্যাল পাঠাতে পারে না।নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ইনসাইট-এ এমন ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে সেই বিপদ এড়ানো যায় অনেকটাই। ওই সময় সূর্যালোক থাকে না বলে রোভার, ল্যান্ডারদের সোলার প্যানেলগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। কিন্তু ইনসাইট-এর সোলার প্যানেলগুরো দিনে ২০০ থেকে ৩০০ ওয়াট সূর্যালোক পেলেই সক্রিয় থাকবে।উৎক্ষেপণের পর মহাকাশে টানা সাত মাস দৌড়ে সোমবার গভীর রাতে মঙ্গলে পা ছুঁইয়েছে নাসার ওই ল্যান্ডার মহাকাশযান। পাঁচ বছর আগে নাসার পাঠানো রোভার ‘মিস কিউরিওসিটি’ এখন যেখানে রয়েছে, তার ধারেকাছেই মঙ্গলের বিষূবরেখায় ‘এলিসিয়াম প্লানিশিয়া’ এলাকায় নেমেছে ইনসাইট। যে এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে বহু কোটি বছর আগে লাল গ্রহ-এর অন্দরের আগ্নেয়গিরিগুলো থেকে বেরিয়ে আসা লাভা স্রোত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যে হেতু সেই লাভা স্রোত ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে, তাই লাভা জমে থাকা ওই এলাকা অনেকটাই সমতল। এবড়োখেবড়ো নয় বলেই বিস্তর হিসেব কষে, বেছে বেছে মঙ্গলের বিষূবরেখার ওই এলাকাতেই ইনসাইট-কে নামিয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। যাতে কোনও ভাবে টাল সামলাতে না পারার জন্য ব্যাঘাত না ঘটে ইনসাইট ল্যান্ডারের কাজকর্মে।