মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ২১ আগষ্ট হামলার শহীদদের স্বরনে আলোচনা সভা ও দোয়া
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের স্বরনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বিকেল ০৪:৩০ ঘটিকার সময় ডাসার উপজেলায় ডি,কে,আইডিয়াল সৈয়দ আতাহার আলী একাডেমী এন্ড কলেজ হল রুমে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানটি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন, আহবায়ক, ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাসার উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব সারমীন ইয়াসমীন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আ: মতিন হাওলাদার, যুগ্ম আহবায়ক, ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম হাওলাদার, যুগ্ম আহবায়ক, ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগ, এ্যাডঃ বিদ্যুৎ কান্তি বাড়ৈ, যুগ্ম আহবায়ক, ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া ও উপস্থিত ছিলেন ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমীন ইয়াসমীন বলেন ডাসার উপজেলায় আমি প্রথম নির্বাহী অফিসার হিসেবে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি সেই সাথে শ্রদ্ধাভরে স্মরন করছি ২১ আগষ্ট সকল শহীদদের প্রতি। সভাপতির বক্তব্যে আহবায়ক সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন বলেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ও ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট একই সুত্রে গাঁথা। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুসহ স্বপরিবারে হত্যা করে ঐ খুনি জিয়া, সেই জিয়ার সন্তান তারেক জিয়া বঙ্গবন্ধুর মেয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেস্টা করে। অন্যান্য বক্তারা আরো বলেন আজ একুশে আগষ্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ সবমিলিয়ে ২৪ জন মারা গিয়েছিলেন। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন ৫ শতাধিক নেতা-কর্মী। আহত হন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। আহত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অনেকে এখনও স্প্লিন্টারের আঘাত নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে সংগঠনের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ দলের প্রথম সারির জাতীয় নেতাদের হত্যার উদ্দেশে ওই ঘৃণ্য হামলা চালায় ঘাতকচক্র। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় গুলি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি আহত হন, তার শ্রবণশক্তি চিরদিনের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ছিল শনিবার। বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী সমাবেশ ছিল। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে যাওয়ার কথা ছিল। এ কারণে মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে অস্থায়ী মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বুলেট প্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জে চেপে বিকেল ৫টার একটু আগে সমাবেশস্থলে পৌঁছান শেখ হাসিনা। সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের পর তিনি বক্তব্য শুরু করেন।বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে বক্তৃতা শেষ করে শেখ হাসিনা তার হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগোতে থাকেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে। ঠিক সে মুহূর্তেই শুরু হয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগল একের পর এক গ্রেনেড। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে ট্রাকে অবস্থানরত নেতারা ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মানব ঢাল রচনা করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। পরে ঘাতকরা শেখ হাসিনার গাড়িকে টার্গেট করে গুলি চালায়। তাকে আড়াল করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ।২১ আগস্টের সেই রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। বাকিরা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নারী নেত্রী আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ আগস্ট মারা যান। বর্বরোচিত ওই হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন, ইসাহাক মিয়া প্রমুখ।২০০৪ সালের ২১ আগষ্টের ঘটনার ১৪ বছর ১ মাস ২০ দিন পর রায় ঘোষণা করা হয়। মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক দুইজন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জন ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত চারজন পলাতক রয়েছেন।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ও হতাহতদের স্মরণে ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছর সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এবারও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, কাজী মাহমুদুল হাসান দোদুল, যুগ্ম আহবায়ক, ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগ। সর্বশেষে সকল শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে আলোচনা সমাপ্ত করা হয়।